মোবাইলহীনা

আজ আমাদের মোবাইল ফোন ছাড়া এক মুহুর্ত চলে না। এটা আমাদের জীবনের একটা অঙ্গ হয়ে গেছে। মোবাইলহীন জীবনটা এখন ভাবাই যায় না। কিন্তু এটাওতো  সত্য মোবাইলহীন জীবনও আমরা দেখেছি। এখন অনেক ঘটনা মনে পড়ে, মনে হয়, সেইসময় যদি মোবাইল ফোন থাকত তাহলে ঘটনাটা অন্যরকম হত। তখন মোবাইলহীন জীবনে অনেক মজার ঘটনাও ঘটত। সে রকমই একটি ঘটনা আমার এক মহিলা সহকর্মী বলেছিল। তার সেই গল্পটাই আজ এখানে বলব।তার মুখ দিয়েই শোনা যাক।

আমি তখন চাকুরীতে যোগ দিয়েছি এবং সবে বিয়েও হয়েছে।   আমি কলকাতার কাছের এক মফঃস্বল অঞ্চল থেকে অফিস করতাম। একদিন অফিসের পর বইপাড়ায় (কলেজ ষ্ট্রীট ) গিয়ে কিছু বই কিনতে যাবার জন্য আমি আমার Hubby কে শিয়ালদহ ষ্টেশনে আসতে বলেছিলাম, ফিরতে দেরী হবে বলে। সেখান থেকে দুজনে একসঙ্গে কলেজ ষ্ট্রীটে গিয়ে বই কিনে বাড়ী ফিরবো – এই ছিল প্ল্যান।

কথা মতই কাজ ।আমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে সময়ের আগেই শিয়ালদহ ষ্টেশনে পৌঁছে গেলাম, এবং তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। শিয়ালদাহ ষ্টেশনে তখন  সেরকম বসার কোন ব্যাবস্থা  ছিল না । কিন্তু মোটা মোটা থামের চারপাশে সিমেন্টের বাঁধানো বসার ব্যাবস্থা  ছিল। প্রয়োজনে সবাই সেগুলোকেই সবাই ব্যাবহার করতো ।  আমিও সময় আছে দেখে একটা থামের ওই বেঞ্চে বসে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম ।

এদিকে সেও নির্ধারিত সময়ের কিছু আগেই শিয়ালদহ পৌঁছে যায় । থামের আড়ালে বসা  আমাকে দেখতে না পেয়ে, ভাবলো অফিস থেকে দেরীতে বেরিয়েছি হয়ত, তাই আসতে দেরী হচ্ছে।  এই সব ভেবে আমার জন্য অপেক্ষা করার জন্য সেও একটা থামের বেঞ্চে বসেছিল। মোবাইলহীন যুগে এছাড়া করারই বা কি ছিল ! এখন হলে এর মধ্যে কতবার ফোন করা হয়ে যেত।  আমরা দুজনেই অপেক্ষা করতে লাগলাম। সময় তার মত কেটে গেল, দেরী হচ্ছে দেখে মনটা অস্থির অস্থির হতে লাগলো। আমি এবার উঠে পড়লাম ।  পায়চারি করতেই  দেখি সে আমার থামের উল্টোদিকে বসে একটা মাগাজিনে মগ্ন। মজার কথা হল আমরা একই থামের দুইপাশে বসে অপেক্ষা করে চলেছি ।থামটা মোটা বলে আমরা কেউ কাউকে দেখতে পাই নি।আমি হাসতে হাসতে সামনে গিয়ে দাড়ালাম। আমাকে দেখেই বলল – এত দেরী ? আমি বললাম কোথায় দেরী! আমি অনেকক্ষন এসেছি। তুমি আমার পেছনে বসে ছিলে, দেখতে পাওনি ? হাসিই পাচ্ছিলো। কেউ কাওকে  দোষারোপ করতে পারলাম না কিন্তু নিজেদের বোকামির জন্য হাসিও পাচ্ছিলো । দিনটা নষ্ট হল।
সেদিন কলেজ ষ্ট্রীট যাওয়া মাথায় উঠলো। কিছু টুক টাক খেয়ে ফিরতি ট্রেনে উঠে পড়লাম। তখন অফিস ভীড় শুরু হয়ে গেছে। দুজন একসঙ্গে বাড়ী ফিরছি এটাই ছিল সেদিনের বড় পাওনা। এই মজার  ঘটনা এখনও মনে পড়লেই হাসি পায়। অনেক সময় মনে মনে হাসি। আজ হটাত মনে পড়লো তাই আপনাকে না বলে পারলাম না। এখন ভাবি – তখন আজকের এই মোবাইল নামক যন্ত্রটা  ( ফোন) থাকলে এই হাস্যকর পরিনতিটা হত না সেদিন । ভেবে অবাক হই, একটি থামের আড়ালে দুজনে বসে সময় কাটিয়ে বাড়ী ফিরে এলাম শেষে।

কাজলা দিদি

আমরা ছাত্রাবস্থায় কিছু কবিতা পড়েছিলাম, কিছু কিছু এখনও মনে গেঁথে আছে। সেরকমই একটা কবিতা এখানে দিলাম, আশা করি আপনাদের পুরানো স্মৃতি উস্কে দেবে, হয়ত ভাল লাগবে —

কাজলা দিদি

বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই–
মাগো, আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই ?
পুকুর ধারে, নেবুর তলে
থোকায় থোকায় জোনাই জ্বলে,–
ফুলের গন্ধে ঘুম আসেনা, একলা জেগে রই;
মাগো, আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?

সে দিন হতে দিদিকে আর কেনই বা না ডাকো,
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো ?
খাবার খেতে আমি যখন
দিদি বলে ডাকি তখন,
ওঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসেনাকো,
আমি ডাকি, – তুমি কেন চুপটি করে থাকো ?

বল মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল বিয়ে হবে!
দিদির মতন ফাঁকি দিয়ে
আমিও যদি লুকাই গিয়ে–
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে?
আমিও নাই, দিদিও নাই – কেমন মজা হবে!

ভুঁইচাঁপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল;
ডালিম গাছের ডালের ফাঁকে
বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিয়ো না মা ছিঁড়তে গিয়ে ফল;–
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবে কি মা বল!

বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ ঊঠেছে ওই–
এমন সময়,মাগো,আমার কাজলা দিদি কই?
বেড়ার ধারে পুকুর পাড়ে
ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে ;
নেবুর গন্ধে ঘুম আসেনা -তাইতো জেগে রই;-
রাত হল যে,মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?
By : যতীন্দ্রমোহন বাগচী