An evening in Paris

98e2d-eiffeltower1-bmp
কে ভেবেছিল আমি প্যারিসে আসব এবং  An Evening in Paris-এর স্মৃতি নিয়ে ফিরব।  আমরা Dinner সেরে তাড়াতাড়ি হোটেলে নির্দিষ্ট রুমের চাবি নিয়ে ফ্রেশ হয়ে পোশাক পালটে বেরোতে বেরোতে ৮-৩০/৮-৪০ মিঃ হয়েই গেল। পোশাক পাল্টানোর প্রয়োজন হল লীডো Show’র জন্য। আমাদের বলা হয়েছিল টি শার্ট বা জিন্স পরে যেন না যাই। কোট প্যান্ট টাই বা শার্ট প্যান্ট পরে যেতে বলা হয়েছিলো কারন লীডো শোতে নাকি এলিটরা যায়। কাজেই ক্যাজুয়েল পোশাকে না যাওয়াই ভাল। তাই পোশাক পাল্টাতেই হল। আমাদের টার্গেট ছিল ০৯ টার CRUISE টা ধরার। Seine (সীন) নদীতে ১ ঘন্টার ক্রুইজ। তারপর লীডো Show. আমাদের Tour Guide আগেই বলেছিল প্যারিসে ইন্ডিয়ার মত ট্রাফিক জ্যাম আছে। তাই সত্য হল। আমাদের আইফেল টাওয়ার পৌঁছাতে সাড়ে ৯টা বেজে গেল। দশটার ক্রুইজ ছাড়া উপায় নেই। ম্যানেজার আমাদের সবাইকে টিকেট দিয়ে দিল। আমরা ক্রুইজে ওঠার লাইনে দাড়ালাম। আইফেল টাওয়ার ততক্ষনে আলো জ্বলতে শুরু করেছে। প্রতি ঘন্টায় আইফেল টাওয়ার Twinkling Light জ্বলে । তারমানে দশটার সময় ক্রুইজ শুরু হবে এবং তখনি টাওয়ারের লাইট নিভে যাবে এবং Twinkling শুরু হবে। আমরা ক্যামেরা তাক করে অপেক্ষা করতে লাগলাম। আইফেল টাওয়ারের খুব কাছেই ক্রুইজের জেটি। যথাসময়ে দুটিই একসঙ্গে শুরু হল। জাহাজ থেকে যথাসাধ্য ছবি তোলার চেষ্টা করলাম।
চলন্ত জাহাজ থেকে তোলা তাই মনে হচ্ছে আইফেল টাওয়ারটাই দুলছে। আসলে জাহাজ দুলছে, আমার ক্যামেরাও দুলছে।
একঘন্টার ক্রুইজ, ১০ টা থেকে ১১টা। আবার ১১ টায় লীডো শো। সে কথায় পরে আসছি। আগে SEINE নদীতে ক্রুইজ করি। রাত ১০ টা কিন্তু এখানে সবে সন্ধ্যা হল। তাই যখন নদীর পাড় ঘেঁসে আমাদের জাহাজটা এগোচ্ছিলো তখন পাড়ে প্রচুর মহিলা পুরুষ, তরুন তরুনীরা আড্ডা, গান বাজনায় ব্যাস্ত । নদীর পাড় বাঁধানো এবং বসার ভাল ব্যাবস্থা করা আছে। তরুন তরুনীরা জোড়ায় জোড়ায় বা দল বেঁধে বসে আছে। আমাদের হাত দেখিয়ে, চিৎকার করে স্বাগত জানাচ্ছিলো।

এই সীন নদীর দুই পাড়ে  সব ঐতিহাসিক ইমারতগুলো ও প্যারিসের সব ল্যান্ডমার্ক  অবস্থিত। আইফেল টাওয়ারও এই নদীর পাড়ে। সব লাইট দিয়ে সুন্দরভাবে সাজানো। এগারোটায় আমাদের ক্রুইজ শেষ হল। এরপর লীডো শো। 

Photo Credit to WIKIPEDIA

প্যারিসের  অভিজাত Champs-Elysees এভিন্যুতে লিডো থিয়েটার। সাড়ে ১১টায় শো। বিশাল লাইন। ট্যুর ম্যানেজার ম্যানেজ করে আমদের সবার আগে যাবার ব্যাবস্থা করে দিল। আমরা ভাল সামনের সীট পেয়ে গেলাম। আমরা দুজনে একটা সোফায় বসলাম।একটু পরেই স্যাম্পেন / সফট ড্রিঙ্ক পরিবেশন হল। আমাদের ড্রিঙ্ক শেষ হতেই শো শুরু হল।

আমাদের মহিলা ট্যুর ম্যানেজার আগেই বলেছিল – শো’ তে টপলেশ ন্যুডিটি থাকবে কিন্তু সবই আর্টিষ্টিক, নান্দনিকভাবে উপস্থাপিত করা হয়, কোনরুপ vulgerity থাকে না।  গান দিয়ে শো শুরু হলো । এক সুন্দরি মহিলা স্টেজের উপর হতে নেমে এলেন, তারপর গান গাইতে শুরু করলেন। তারপরেই স্টেজে একঝাঁক পরীর মত মেয়েরা উপস্থিত। বক্ষদেশ উন্মুক্ত। নিম্নাংশ স্কিন কলর চাপা ড্রেস দিয়ে আবৃত। ফলে তাদের নগ্ন বলেই মনে হয়। যাই হোক তারা স্টেজের সামনে এসে দুই হাত প্রসারিত করে তাদের অপুর্ব বক্ষসম্পদ দর্শকদের সামনে মেলে ধরল, নানান ভঙ্গিমায়, গানের তালে তালে। তারা সবাই রিতিমত সুন্দরী, কম বয়েসী যুবতী, শারিরিক গঠন  সৌন্দর্যমন্ডিত, দু চোখভরে দেখার মত। নারী সৌন্দর্যের এক  অপুর্ব নিদর্শন বলা যেতে পারে। দর্শকবৃন্দ সব নিশ্চুপ, পিন ড্রপ সাইলেন্স। বোঝাই যাচ্ছে সবাই সৌন্দর্য্যসুধা পানে ব্যাস্ত। একবার নয় বারবার সেই সৌন্দর্য্যসুধা পানের সুযোগ এলো। এটা আসলে এক ধরনের উন্নত ক্যাবারে শো, রুচিসম্মত  এবং এলিটদের  ক্লাশদের জন্য । 

এই শোতে  অনেক কিছুই দেখার আছে। এখানে স্টেজ, লাইটিং এবং সীন পাল্টানোর ব্যাপারগুলো খুবই সুনিপুন এবং স্বয়ংক্রিয় (Automatic) ভাবে করা হয় । ইন্ডিয়া  থীমে খাজুরাহ মন্দির এবং তার শিল্পকলা নাচ ও গানে বর্ননা করা হল। মন্দির স্টেজের নিচে থেকে উঠে এল, স্বয়ংক্রিয়ভাবে  এবং মন্দিরগাত্রের মুর্তিগুলো আস্তে আস্তে জীবন্ত হয়ে স্টেজে নেমে এল।এটা বেভাল লাগলো।

Theme:Khajuraho India (Photo Credit : http://www.favilletours.com)

খন শো শেষ হল খন রাত ১-৩০টা। বাইরে তখন রাস্তায় মানুষের এবং গাড়ীর ঢল, দেখে মনে হচ্ছে কলকাতার সন্ধে সাতটা।
প্যারিস এসে লিডো শো না দেখলে প্যারিস ভ্রমন অসম্পুর্ন এমন কথাই বলা হয়।  ভাবতে অবাক লাগে এই শো 1946 থেকে একটানা চলে আসছে। কত জনপ্রিয় হলে এটা সম্ভব!